শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বর গত বছর দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। প্রথমে রাজধানীতে এর প্রকোপ দেখা দিলেও ধাপে ধাপে বেড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ। ডেঙ্গুতে অন্তত ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। এর আগের বছর রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল চিকুনগুনিয়া। মূলত বর্ষা মৌসুমে এই দুটি রোগ ছড়ায়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বছরজুড়েই ডেঙ্গু রোগের বিস্তার লক্ষ্য করা গেছে। শীত মৌসুমেও মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন- এমন খবর মিলেছে।
মার্চ থেকে মূলত এ রোগের প্রকোপ শুরু হয়। জুন-জুলাই-আগস্টে বিস্তার লাভ করে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সামনে ভর মৌসুমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি কী আকার ধারণ করে তা নিয়ে নগরবাসী উদ্বিগ্ন। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ডেঙ্গু চিকনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর-বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত মানুষের সঙ্গে কথা বলে বাড়তি মশার উপদ্রবের তথ্য মিলেছে। ঢাকার কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের বছরগুলোয় শীতের সময় মশার দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু এবার শীত মৌসুমেও মশার দৌরাত্ম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া দুটি রোগ নিয়েই উদ্বেগ বিরাজ করছে।
দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজধানীবাসী। তারা বলছেন, মশা নিধনে মাঝে মধ্যে ওষুধ ছিটানো ছাড়া সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম তারা দেখছেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক জরিপেও উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে। জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১২ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০ শতাংশ এলাকায় এডিস লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতির মাত্রার চিত্রও উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত মুগদা এলাকা, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মায়াকানন এলাকা, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের শাজাহানপুর এলাকা ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কলাবাগান এলাকা এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাফরুল এলাকা, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম আগারগাঁও এলাকা ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নূরজাহান রোড এলাকায় ২০ পয়েন্টের বেশি এডিসের লার্ভার ঘনত্ব সূচক বা ব্রুটো ইনডেক্স মিলেছে। দক্ষিণের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাবাজার এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৭০ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৫০ পাওয়া গেছে। এছাড়া ধানমন্ডি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগসহ পুরান ঢাকার বসবাসকারী একাধিক বাসিন্দা, ব্যবসায়ী এবং পথচারী সন্ধ্যা নামতেই মশার উৎপাত বেড়ে যায় বলে জানান।
অথচ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলছে, মশা নিয়ন্ত্রণে আছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর কাজ করছে। পাশাপাশি মশক নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। ক্র্যাশ প্রোগ্রামে অত্যাধুনিক নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে। ওষুধেরও কোনো ঘাটতি নেই। কাজেই মশা এবার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। দুই সিটি করপোরেশনের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভা করছেন তারা।
মুগদা এলাকার বাসিন্দা মুহাম্মদ শাকিল বলেন, এখানে অনেক মশার উৎপাত। চারতলার বাসায়ও প্রচুর পরিমাণে মশা, যা আগে ছিল না। লিফটে ওঠানামা করার সময় দেখি লিফটের মধ্যে বড় বড় মশা। সামনে বর্ষাকালে মশা আরও বেড়ে যাবে আমার ধারণা। তিনি আরও বলেন, দিনের বেলা কোনরকম থাকা গেলেও বিকেলের পর থেকে মশার উৎপাতে বসে থাকাই মুশকিল হয়ে যায়। সিটি কর্পোরেশন থেকে মাঝে মধ্যে যে ওষুধ ছিটানো হয় তাতে মশা মরে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, আগের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১৮ সালে বর্ষ-পরবর্তী কোনো জরিপ হয়নি। তবে সব ইনডেক্সেই ২০১৭ সালের তুলনায় এবার মশার উপস্থিতি কম। মশার উপস্থিতি ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা আগের বছরের তুলনায় কম পাওয়া গেছে। তাছাড়া এবার অনেক বেশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো হয়েছে। এ জরিপ মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।
Leave a Reply